মহান আল্লাহ নিজের জন্য জুলুম হারাম করে নিয়েছেন। এবং তা মানুষের জন্য হারাম ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি নিজের ওপর ও বান্দাদের ওপর জুলুম হারাম করে নিয়েছি। অতএব তোমরা পরস্পরের ওপর অত্যাচার কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৬৯ ) জুলুম তিন প্রকার— এক. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা। এটা সবচেয়ে বড় জুলুম। আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ করুন, যখন লুকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার পুত্রকে বলেছিল, হে আমার প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না। নিশ্চয়ই শিরক মহা পাপ।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৩) দুই. বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে নিজে নিজের প্রতি জুলুম করা। কোরআনের পরিভাষা মতে, পাপ করাও এক ধরনের জুলুম।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালিম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২৯ ) তিন. আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর বান্দাদের ওপর জুলুম করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয়ই তিনি জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪০) সবচেয়ে ঘৃণিত পাপ অন্যের ওপর জুলুম করা। জালিম তার জুলুমের পরিণতি দুনিয়াতে ভোগ করে আর পরকালের শাস্তি আরো ভয়াবহ। জালিমের মন্দ পরিণতি : জুলুমের পরিণতি দুনিয়াতে ভোগ করতে হয়। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই মহান আল্লাহ জালিমকে সুযোগ দেন। এরপর তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তাকে ছাড়েন না।

এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন : ‘এমনই তোমার রবের পাকড়াও, যখন কোনো অত্যাচারী জনপদবাসীকে তিনি পাকড়াও করেন। নিশ্চয়ই তার পাকড়াও চরম মর্মান্তিক, অতিশয় কঠোর।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৭৫ ) আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত : জালিম আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৬)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সাবধান! জালিমদের ওপর আল্লাহর লানত।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১৮) দুনিয়াতে লাঞ্ছিত হয় : জালিমকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করে থাকেন। এটা আল্লাহ তাআলার নিয়ম। যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জালিম সম্প্রদায় ও অত্যাচারীদের লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করেছেন।

আল্লাহ বলেন, ‘কাফিররা নবীদের বলেছিল, আমরা তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেব নতুবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। তখন তাদের কাছে তাদের রব ওহি পাঠালেন যে আমি জালিমদের অবশ্যই ধ্বংস করে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ১৩ ) পৃথিবীর এক অত্যাচারী বাদশাহর নাম ফেরাউন। তার পরিণতি মহান আল্লাহ কোরআনে বর্ণনা করেছেন—‘অতঃপর আমি (আল্লাহ) তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদের সাগরে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং দেখুন, জালিমদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৪০ ) জালিম কখনো সফল হয় না : জালিম কখনো সফলতার মুখ দেখতে পারে না। সাময়িকভাবে সে নিজেকে সফল মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে সে কখনো সফল হতে পারে না। এবং সঠিক পথও পায় না। কোরআনে এসেছে, ‘আর আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।’

(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই জালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ২১) বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয় : জালিমের জীবন থেকে বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তার সম্পদ ও সন্তানের জীবনের বরকত কেড়ে নেওয়া হয়। যে সমাজে অত্যাচার ছড়িয়ে পড়ে, সে সমাজ থেকে আল্লাহ তাআলা বরকত ছিনিয়ে নেন এবং সেখানে বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে দেন। হাকিম ইবনু হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করার)। যদি তারা সত্য বলে এবং প্রকৃত অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯) বদদোয়া পতিত হয় : জালিমের ওপর মজলুমের বদদোয়া পতিত হয়।

মজলুমের অসহায় আর্তনাদের গোঙানি আরশে আজিমে চলে যায়। হাদিসে এসেছে, মজলুম ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। তার আবেদন আল্লাহ সরাসরি গ্রহণ করে নেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) যখন মুআজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠান, তাঁকে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৮) মহান আল্লাহ আমাদের জুলুম থেকে হেফাজত করুন।